১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫—বাংলাদেশ জুড়ে লাখো তরুণ-তরুণীর স্বপ্নের দিন। এই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। প্রিলি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে গড়ে তোলা শ্রম, অধ্যবসায় ও আত্মত্যাগের বাস্তব পরীক্ষার মঞ্চ।
প্রশ্ন হলো—এখন, পরীক্ষার আর কয়েকটা দিন বাকি থাকতে আপনার করণীয় কী? নতুন কিছু পড়বেন, নাকি শুধু রিভিশন? উত্তর খুব সহজ: শেষ মুহূর্তের কৌশলই পার্থক্য গড়ে দেয়। আজ আমরা সেই কৌশল নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব।
পরীক্ষার একেবারে আগে নতুন কোনো অধ্যায় শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এই সময় আপনার পূর্বে পড়া বিষয়গুলোকে দৃঢ় করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় দিন বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও মানসিক দক্ষতার জন্য।
প্রতিটি টপিকের মূল সূত্র, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও টেবিলগুলো ছোট খাতায় লিখে রাখুন।
শেষ মুহূর্তে বড় বই না খুলে এই নোট থেকেই পুনরাবৃত্তি করুন।
প্রমাণিত সত্য হলো, বিসিএস প্রিলি পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরণ অনেকাংশেই পুনরাবৃত্ত হয়। তাই বিগত ১০ বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করা আপনার প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করবে।
অনুশীলন করুন আসল প্রশ্নপত্র দিয়ে।
কোন বিষয় থেকে কতগুলো প্রশ্ন এসেছে তা নোট করুন।
পুনরাবৃত্ত প্রশ্ন দেখে আত্মবিশ্বাস অর্জন করুন।
👉 অনেক পরীক্ষার্থী বলেন, শুধু বিগত প্রশ্ন নিয়মিত সমাধান করেই তারা প্রিলিতে ভালো স্কোর করেছেন। আমি নিজেও ভালো ফল পেয়েছি ৪০তম বিসিএস প্রিলিতে।
প্রিলি পরীক্ষায় ২০০ প্রশ্ন, সময় ২ ঘণ্টা। অর্থাৎ, প্রতি প্রশ্নে আপনার হাতে গড়ে ৩৬ সেকেন্ড। তাই সময় ব্যবস্থাপনা ছাড়া ভালো করা প্রায় অসম্ভব।
এজন্য প্রতিদিন অন্তত একটি করে মডেল টেস্ট দেওয়া উচিত। এতে আপনি বুঝতে পারবেন—
কোন বিষয়ে আপনার বেশি সময় লেগে যায়,
কোন প্রশ্ন আপনি দ্রুত সমাধান করতে পারেন,
এবং কীভাবে পরীক্ষার হলে কৌশল বদলাতে হবে।
👉 বাস্তব পরীক্ষার মতো অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য এখন অনেকেই অনলাইনে মডেল টেস্ট দিচ্ছেন। যেমন—BCS Exam Aid অ্যাপে মডেল টেস্ট দিয়ে আপনি আসল পরীক্ষার মতো চাপ ও সময় ব্যবস্থাপনার অনুশীলন করতে পারবেন। এটি শুধু প্রস্তুতি নয়, আপনার আত্মবিশ্বাসও বহুগুণ বাড়াবে।
ব্যাকরণ অংশে শুদ্ধ বানান, বিভক্তি, সন্ধি, সমাসের মতো নিয়মগুলো ভালোভাবে ঝালিয়ে নিন।
সাহিত্য অংশে গুরুত্বপূর্ণ কবি-সাহিত্যিক, তাঁদের গ্রন্থ ও অবদান মুখস্থ রাখুন।
নিয়মিত vocabulary চর্চা করুন: synonym, antonym, one word substitution।
grammar অংশে tense, voice, narration, preposition পুনরাবৃত্তি করুন।
শতকরা, লাভ-ক্ষতি, গড়, অনুপাত, সময়-দূরত্ব, সুদ—এসব মৌলিক প্রশ্ন বেশি আসে।
মানসিক দক্ষতায় সংখ্যা ধারা, কোডিং-ডিকোডিং, রিজনিং অনুশীলন করুন।
সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদগুলো, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় দিবস, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সাম্প্রতিক বিষয়গুলো দেখে নিন।
আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্ব রাজনীতি, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি।
অনেকেই বলেন—“আমি সব পড়েছি, কিন্তু হলে গিয়ে গুলিয়ে ফেলি।” এর কারণ মানসিক চাপ।
পরীক্ষার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমান।
অযথা বেশি পড়াশোনার চেষ্টা করবেন না, বরং হালকা রিভিশন করুন।
নিজের সক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখুন। মনে রাখবেন, বিসিএস পরীক্ষা জ্ঞানের সঙ্গে মানসিক দৃঢ়তারও পরীক্ষা।
সময়ের অন্তত ৩০ মিনিট আগে হলে পৌঁছে যান।
উত্তরপত্র পূরণে ভুল করবেন না, আগে নির্দেশ ভালোভাবে পড়ুন।
যেসব প্রশ্ন একেবারেই আসে না, সেখানে সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যান।
প্রথমেই সহজ প্রশ্নগুলো সমাধান করুন—এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
পরীক্ষার আগে অতিরিক্ত টেনশন নিয়ে রাত জাগবেন না। এতে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
হালকা ব্যায়াম করুন, যাতে মস্তিষ্ক সতেজ থাকে।
পরীক্ষার দিন সকালে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খান।
৪৭তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার শেষ মুহূর্ত এখনই। হয়তো সবার প্রস্তুতি সমান নয়, কিন্তু সঠিক কৌশল, রিভিশন আর মানসিক দৃঢ়তাই আপনাকে এগিয়ে রাখবে। মনে রাখবেন, প্রিলি হলো যাত্রার শুরু—মূল লক্ষ্য হলো লিখিত ও মৌখিক পর্যন্ত পৌঁছানো।
👉 তাই শেষ সময়ে বেশি বই না খুলে রিভিশন, মডেল টেস্ট ও মানসিক প্রস্তুতি—এই তিনটিতেই জোর দিন।
আপনার প্রতি শুভকামনা রইল—স্বপ্নপূরণের পথচলায় এই প্রিলি হোক সাফল্যের দরজা।
- অনিঃশেষ শুভকামনায়
এ. এইচ. এম. আজিমুল হক
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট
৪০তম বিসিএস
Article Comments